গল্প আছে—এক ভদ্রলোক শেষ পর্যন্ত মলমূত্রে নোংরা হয়ে মারা গিয়েছিলেন। তাঁকে পরিষ্কার করবার জন্যে এক মেথর ডাকা হল। মেথর বলল, ময়লা পরিষ্কার করা তার পেশা বটে কিন্তু মড়া পরিষ্কার করা তার কাজ নয়—সে কাজ মুদ্দোফরাশের। তখন ডাকা হল মুদ্দোফরাশকে। মুদ্দোফরাশ বলল, হ্যাঁ মড়া পরিষ্কার করা তার কাজ বটে কিন্তু ময়লা পরিষ্কার করা তার কাজ নয়। সে কাজ মেথরের। সুতরাং তার দ্বারাও ভদ্রলাকের গতি হবে না । মহা মুশকিল। কী করা যায়। শেষ পর্যন্ত পাড়ার মাতব্বরের মাথার বুদ্ধি খেলল—একজন ডাক্তারকে ডাকা যাক ।
তাই ডাকা হল । ডাক্তার এলেন—মড়াও পরিষ্কার করলেন, ময়লাও পরিষ্কার করলেন। মেথরেরও কাজ করলেন, মুদ্দোফরাশেরও কাজ করলেন। এই হল একজন ডাক্তারের পেশা—তার জীবন ।
পৃথিবীর যত ক্লেদ, যত ব্যাধি—যত দৈন্য তাই নিয়েই তার কাজ । তার ভাগ্যে লেখা—তার সমস্ত কর্ম-জীবন কাটবে এই কদর্য পরিবেশে—এই রোগ আর দারিদ্র্যের ভিতরে।
আর শুধু কি তাই ? তার আর্থিক সাচ্ছল্য নির্ভর করবে একদিকে সমাজের আধি-ব্যাধির ওপরে আর অন্যদিকে বিপন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের সামর্থ্যের ওপরে।
এই জীবন নিয়ে ডাক্তার বাঁচে কি করে ? তার তো অমানুষ হয়ে যাবার কথা —পিশাচ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু সবাই তো তা হয় না । কেন হয় না বলতে পারেন ?
একবার গঙ্গাদেবী গিয়ে নারায়ণকে নালিশ করেছিলেন। পৃথিবীর যত পাপী সবাই গঙ্গাস্নান করে পাপমুক্ত হয়। কিন্তু সেই পাপীদের সংস্পর্শে এসে গঙ্গাদেবীর দেহে জ্বালা ধরে যায়—এর কি কোন উপায় নেই ?
তার উত্তরে নারায়ণ গঙ্গাদেবীকে ভরসা দিয়েছিলেন— পাপীরা স্নান করে করুক। কিন্তু সাধু সন্তরাও গঙ্গাস্নান করেন। তাঁদের স্পর্শে গঙ্গাদেবীর উত্তপ্ত দেহ শীতল হবে।
সেই রকম বর বোধহয় সতু বঘিদের জাতভাইদের ওপরেও আছে। অন্তত সতু বঘির তাই মত।
আর সেই জন্যেই সতু বদ্যি যখন চোখ মেলে দেখে তখন কখনো হয়তো দেখতে পায় পাপীয়সী ভ্রষ্ট। নারীর ভিতরে মহিমময়ী মাতৃমূর্তি, হয়তো পাগল…
সতু বদ্যির উপাখ্যান
সতু বদ্যি
প্রকাশক : সুশীলকুমার সিংহ
নতুন সাহিত্য ভবন
৩, শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্টীট, কলিকাতা-২০
মুদ্রাকর : শ্যামল দে
হিন্দ পেপার প্রিন্টার্স
৭৯/৯, লোয়ার সারকুলার রোড
কলিকাতা-১৪
প্রচ্ছদশিল্পী : পূর্ণেন্দুশেখর পত্রী
প্রথম সংস্করণ : বৈশাখ ১৩৬৩
দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৬৪
দাম : তিন টাকা চার আনা
Reviews
There are no reviews yet.