স্টেশনের গা ঘেঁষে কারখানার লম্বা শেভ৷
গেটের পাশে পিতলের ফলকেও নাম লেখা আছে- ছোট ছোট অক্ষরে। আলকাতরা দিয়ে বাইরের দেওয়ালে বিরাট বেমানান হরফে লেখা- নব শিল্পমন্দির।
এই ছোট নগণ্য স্টেশনটি ঘেষে একক শিল্প প্রচেষ্টার অভিনবত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এত বড় হরফ সন্দেহ নেই। কিন্তু পথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়া ইটের দেওয়াল ও টিনের ছাউনিওলা লম্বাটে চালা ও লোহার চিমনিটাই সে কাজ আরও ভালোভাবে করছে, বেখাপ্পা হরফ দিয়ে এ-রকম ঘোষণার কোনোই দরকার ছিল না৷ নজরে পড়ার মতো এ-রকম আর কিছুই নেই স্টেশনে বা আশেপাশে। স্টেশনের সংলগ্ন লাল ইটের ঘর কয়েকটি যতদূর সম্ভব ছোট এবং সংক্ষিপ্ত। স্টেশন মাস্টারের দু-কামরার কোয়ার্টারটি দেখলে মনে হয় ছাদে মাথা ঠুকে যায় না তো, পা ছড়িয়ে শুতে পারে তো ? পথের দু- পাশে শুধু খড় ও টিনের কতকগুলি ঘর এবং চালা, মাত্র কয়েক ঘর মানুষের বসবাস ও দোকান চালাবার প্রয়োজনে এগুলি উঠেছে। কাছাকাছি নাগালের মধ্যে বড় গ্রাম নেই। স্টেশনের লাগাও বসতিটার মতোই এখানে-ওখানে থোপা-থোপা বসানো ছাড়া৷ -ছাড়া বসতি, ছোট ছোট কাঁচা কতকগুলি ঘরের সমষ্টি। গ্রাম অবশ্যই আছে, বাংলার সর্বত্রই ঘন ঘন গ্রাম । স্টেশন থেকে একটু দূরে দূরে পড়েছে গ্রামগুলি। যেন সযত্নে হিসাব করে সমস্ত বড় বড় গ্রাম থেকে যতদূর সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতেই স্টেশন করার জন্য এই স্থানটি বেছে নেওয়া৷
আসলে কিন্তু তা নয়। এখান থেকেই বারতলার জমিদার বাড়ি সব চেয়ে কাছে হয়, মাইল চারেক। অন্য গ্রামের হিসাব ধরাই হয়নি। স্টেশনের নামও বারতলা।
দু-পাশের স্টেশন দুটি বারতলা থেকে বেশি দূরে দূরে নয়। ওই দুটি স্টেশন থেকেই এই এলাকার বেশির ভাগ গ্রামে যাতায়াতের সুবিধা। বারতলায় তাই যাত্রীর ভিড় হয় নাঁ। প্ল্যাটফর্মে হাটলে চোখে পড়ে এখানে-ওখানে ঘাসের চাপড়া গজিয়ে আছে লাল কাঁকর ঢেকে দিয়ে। স্টেশন থেকে বারতলা পর্যন্ত সিধে রাস্তার দু-পাশের কয়েকটি ছোটখাটো গ্রাম আর ওই বারতলার যাত্রীরাই শুধু এই স্টেশন ব্যবহার করে।…
ইতিকথার পরের কথা
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম সংস্করণ- ভাদ্র, ১৩৫৯
দ্বিতীয় সংস্করণ- বৈশাখ, ১৩৬৩
তৃতীয় সংস্করণ- ফাল্গুন, ১৩৭১
চতুর্থ সংস্করণ বৈশাখ ১৩৯৫
প্রকাশক : শ্রীশচীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
প্রকাশ ভবন
১৫, বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলিকাতা ৭৩
মুদ্রাকর : শ্রীদীপক কুণ্ডু
মডার্ণ প্রিন্টিং ওয়ার্কস
২৯/৩, শ্রীগোপাল মল্লিক লেন, কলিকাতা-১২
প্রচ্ছদপট পরিকল্পনা : শ্রীপ্রবীর সেন
দাম : বাইশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা
Reviews
There are no reviews yet.