আর মা কান্দে না
অন্ধকার চারদিকে থৈ থৈ করে। মনে হয় বাতাসে অন্ধকারটা পাক খাচ্ছে ফুলছে আর চারদিকে কেমন ছড়িয়ে যাচ্ছে। উত্তরে দেখো, দক্ষিণে দেখো, আসমানে তাকাও—শুধু কালো। থেকে থেকে কালো মেঘের পিণ্ডগুলে৷ এক দিক থেকে গড়িয়ে যাচ্ছে আরেক দিকে। ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা এসে শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে। শরীর কাঁপে, কিন্তু জুড়ায় না। অন্ধকারের নীচে, উথাল পাথাল বাতাসের অনেক আড়ালে, বয়ে আসা ঠাণ্ডা ঝড়ো বাতাস যেখানে ছুঁতে পারে না, সেখানে কোথায় যেন আগুন জ্বলছে নিশিদিন। জ্বলছে শুধু। বাতাস মোচড় খায় ছুটতে ছুটতে, আসমান গোঁ গোঁ করে ওঠে রাগী জানোয়ারের মতো, তবু জ্বলে সেই নীচের কোথায়। ঠিক ধরা যায় না। তবু জ্বলে, ধিকিধিকি জ্বলে।
কান্নার সঙ্গে, সাধের সঙ্গে, স্বপ্নের সঙ্গে — কেবলি জ্বলে।
নিশিদিন রমজান আলী অসহ্য গলায় ডেকে বলে, মা, তুই আর কান্দিস না, তোর খোদার দোহাই লাগে, চুপ কর।
মা শোনে না। অন্ধকার বাতাসে মোচড় খেতে খেতে কাতরায়। বর্ষণের ঝাপটা ভাঙ্গা চালের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর মা কান্দে। গলা ছেড়ে চিৎকার করে নয়, মুখ বাঁধা জানোয়ার যেমন গোঙায়, তেমনি কাঁদতে থাকে।
রমজান আলীর সহ্য হয় না, তখন গালাগাল দিতে আরম্ভ করে। ক্ষেপে- ওঠা সন্ধেবেলার আসমানকে গাল দেয়। নিজের মায়ের দেহকে শোয়ায় কল্পিত পুরুষ মানুষের বিছানায় এবং শেষ পর্যন্ত চিৎকার করে বলে, তুই মরতে পারিস না বুড়ি…! নর তুই, মরে যা, আমি শান্তি পাই তাহলে ।
কেউ শোনে না। বাতাসে দোল খাওয়া অন্ধকার না ঘোলাটে অসমান না, আর মা’ও হয়তো শোনে না। তাই কান্দে। মনে হয় দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কেবলি কেঁদে যাচ্ছে। বিকেল থেকে চিৎকার করে গাল দিচ্ছে ভয় দেখাচ্ছে, কিন্তু বুড়ি শোনে না। তাই রমজান আলীর মনে থেকে থেকে পালাবার কথাট। জেগে উঠছে এখন। ভাবছে, পালাবে এবার। বৃষ্টিটা থামলে হয়।…
লেলিহান সাধ
শওকত আলী
প্ৰকাশক : চিত্তরঞ্জন সাহা
মুক্তধারা
প্রথম প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ১৯৭৭
দ্বিতীয় প্রকাশ : জুলাই ১৯৮৪
প্রচ্ছদ-শিল্পী : আবুল বারক আলভী
মুদ্রাকর : প্রভাংশুরঞ্জন সাহা
ঢাকা প্রেস, ৭৪ ফরাশগঞ্জ, ঢাকা-১
বাংলাদেশ।
মূল্য : সাদা : পঁচিশ টাকা
নিউজপ্রিন্ট : পনরো টাকা
[A Collection of Short Stories]
By Showkat Ali
Reviews
There are no reviews yet.