লেখকের কথা
বইখানির একটি ছোট্ট ইতিহাস আছে। এক সময়ে মার্কসবাদী মহলে ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙলার জাগরণ নিয়ে বড় বিতর্ক উঠেছিল। রবীন্দ্র ;মার্কসবাদী’তে (পঞ্চম সংকলন, সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯) একটি প্রবন্ধ লেখেন। এতে রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ ; বাঙলার জাগরণের ঐতিহ্যকে তিনি প্রায় নস্যাৎ করে দিতে অগ্রসর হন। সঠিক মার্কসবাদী বিচারে রবীন্দ্র গুপ্তের এই বক্তব্য ছিল আগাগোড়াই ভুল। প্রকৃতপক্ষে, মার্কসবাদের নামে এটি ছিল পেটি- বুর্জোয়া বিপ্লববাদীর কল্পনাবিলাস মাত্র কিন্তু স্বীকার করতেই হবে রবীন্দ্র মার্কসবাদী মহলে একটা নাড়া দিয়েছিল।গণ্ডের প্রবন্ধগলি তখনকার দিনে সবচেয়ে বড় কথা, রবীন্দ্র গুপ্তের প্রবন্ধ প্রকাশের পরে বাঙলার জাগরণ সম্পর্কে আমরা আগে যেভাবে চিন্তা করতাম তা সঠিক ছিল কিনা তা নতুন করে যাচাই করে নেবার প্রয়োজন দেখা দিল।
রবীন্দ্র গঞ্জের বক্তব্যটি যে আগাগোড়াই ভুল ছিল এ সম্পর্কে আমার মনে প্রথম থেকেই কোনো প্রশ্ন ছিল না। আমার প্রতিবাদী বক্তব্যটি ‘মার্কসবাদী’র পরিচালকম-ডলাকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম, যার প্রতিলিপি আমার কাছে রয়েছে। তবে এই বাদানবাদের মধ্যে দিয়ে আমার মনে হয়েছিল বাঙলার জাগরণ সম্পর্কে আগে যা লিখেছি তার মধ্যে যথেষ্ট এটি আছে। দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাঙলার জাগরণের বিচার
শ্রেণী-করতে চেষ্টা করলেও এই বিচার হয়ে রয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে খণ্ডিত। অনেক ক্ষেত্রে অগভীর। তারপর থেকে দুটি দিকে আমি বিশেষ নজর দিতে আরম্ভ করি। প্রথমত, মার্কসবাদী তত্ত্বের আরও গভীরে প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা অনভব করি। দ্বিতীয়ত, ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে ভারতীয় ইতিহাসের মূল উপকরণের (source material) সঙ্গে অধিকতর পরিচয়ের প্রয়োজনও বোধ করি। মনে হল এই দইয়ের মিলন ছাড়া ভারতীয় ইতিহাসের মার্কসবাদী বিচার সার্থক হতে পারে না।
এই মনোভাব থেকে, মূলত রবীন্দ্র গুপ্তের বক্তব্যের জবাব হিসাবে, খানিকটা আত্মসমালোচনা হিসাবেও, আমি এই বই লিখতে শরন করি। এই বইয়ে রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ ; উনিশ শতকের জাগরণের ;ইতিবাচক দিকটি যেমন তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়, তেমনি এই আন্দোলনের শ্রেণীগত সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। আবার, তদানীন্তন কালের অগ্রগমনের ইতিহাসে কৃষক বিদ্রোহগুলির যে বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল বিশেষ গরদত্ব দিয়ে তারও বিচার এই বইয়ে করা হয়েছে। তবে এই বিদ্ৰোহালিকে অত্যধিক আদর্শায়িত করে দেখানোর, বিশেষ করে, তার উপরে আধনিক রঙ চড়াবার প্রবণতার বিরুদ্ধেও সাবধানবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
এক কথায়, বর্জোয়া জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও কৃষক বিদ্রোহলিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবার প্রবণতার বিরুদ্ধে এই বইয়ে মত প্রকাশ করা হয়। বরং দেখানোর চেষ্টা করা হয় যে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও
স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙলা
নৱহৱি কবিরাজ
মনীষা, কলকাতা
SWADHINATAR SANGRAME BANGLA
(Role of Bengal in struggle for freedom)
প্রথম সংস্করণ : মার্চ, ১৯৫৪
দ্বিতীয় সংস্করণ: সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭
তৃতীয় সংস্করণ : জলাই, ১৯৬১ চতুর্থ সংস্করণ : ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত)
প্রকাশক : দিলীপ বসন
মনীষা গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড ৪/৩ বি বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রীট, কলিকাতা-৭৩
মদ্রক : কালান্তর প্রেস
৩০/৬ ঝাউতলা রোড কলিকাতা-১৭
প্রচ্ছদ : খালেদ চৌধরী
মূল্য : পচিশ টাকা
Reviews
There are no reviews yet.